Breaking News



Popular News




Enter your email address below and subscribe to our newsletter
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের স্কন্ধ পুরাণ মতে, বাংলা সনের চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথী বারুণী নামে খ্যাত। কথিত আছে, হিমালয় কন্যা গঙ্গার অপরনাম বারুণী। তাই বারুণী স্নান গঙ্গা স্নানের প্রতিচ্ছবি। জনশ্রুতি রয়েছে, কপিল মুনি এই বারুণী স্নানের সূচনা করেন।
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) এক কৃষ্ণ ভক্ত বলেন, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর পার্ষদ ও মহাবিষ্ণু অবতার শ্রী অদ্বৈত আচার্য কলিযুগে সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীর তীরে তাহেরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার পিতামাতাকে গঙ্গা স্নান করানোর উদ্দেশ্যে ধ্যানমগ্ন হয়ে সপ্তগঙ্গাকে আহ্বান করেছিলেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সপ্তগঙ্গা সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং তার পিতামাতা পণ্য লাভ করেছিলেন। তখন থেকেই মূলত এই গঙ্গা স্নান বা বারুণী স্নানের উদ্ভব। আজকের এই তিথিতে যারা গঙ্গা স্নান করবেন তাঁরা পূণ্যতীর্থের ফল লাভ করবেন।
শনিবার (৬ এপ্রিল ) ভোর থেকে শিবালয় উপজেলার আরিচার যমুনা নদীর তীরে ( ৪ নং ঘাটের নীচে) বিশাল এলাকা জুড়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ বারুণী স্নান উৎসব। বারুণী স্নান উৎসব একদিন হলেও একে কেন্দ্র করে সপ্তাহব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বারুণী স্নান সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও সব ধর্মের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এটি সর্বজনীন মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
এ মেলায় স্থান পেয়েছে সার্কাস, পুতুল নাচ, নাগরদোলা, বায়স্কোপসহ চিত্ত বিনোদনের নানা আযোজন। মেলায় রয়েছে খই, বিন্নি, সাজ বাতাসা, মিষ্টি ও বিভিন্ন খাবারের দোকান। এছাড়াও রয়েছে হ্যান্ডিক্রাফট, খেলনা, প্রসাধনী, কাঠ বেত ও লোহার তৈরি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপকরণ। কত বছর আগে থেকে এখানে উৎসব হচ্ছে এর সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও উপস্থিত বৃদ্ধবৃদ্ধাদের ধারণা দুশো বছরের অধিক।
শিবালয় উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি রথীন সাহা জানান, গঙ্গা পূজা সমাপ্তে ভোর থেকে স্নান যাত্রা শুরু হয়েছে। বিকেল পর্যন্ত এটি চলমান থাকবে। আমাদের দেশের জনগণ অত্যন্ত অসাম্প্রদায়িক।
বিশেষ করে মানিকগঞ্জ জেলার সুনাম সর্বজনবিদিত। আমরা দীর্ঘদিন যাবত এখানে সুষ্ঠ সুন্দরভাবে অনুষ্ঠান করে আসছি। এ বছরও এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শিবালয় বন্দর ব্যবসায়ি সমাজ কল্যাণ সমিতির নেতৃবর্গ এই অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন।
শিবালয় বন্দর ব্যবসায়ি সমাজ কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানান, এই উৎসবকে সুষ্ঠ এবং সুন্দর করার জন্য তাদের সমিতির সকল সদস্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা প্রয়োজনীয় সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ সরকার জানান, বারুণী স্নান উৎসবকে উৎসবমুখর ও সুন্দর করতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.বেলাল হোসেন দৈনিক ভোরের কাগজকে জানান, বাংলাদেশের জনগণ অসাম্প্রদায়িক নীতিতে বিশ্বাসী। এদেশের জনগণ একে অপরের ধর্মের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। শিবালয়ের বারুণী স্নানটি অত্যন্ত প্রাচীন এবং প্রসিদ্ধ। এটি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে উদযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।