Enter your email address below and subscribe to our newsletter

কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খাল এখন হেটেই পার হওয়া যায়!

Share your love

কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি

রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী শুভাঢ্যা খাল। কালের বিবর্তন ও মানুষের অত্যাচারে আজ হারিয়ে গেছে। একসময় কেরানীগঞ্জে সুপেয় পানির অন্যতম উৎস ছিল শুভাঢ্যা খাল। এতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন অনেকে পরিবার। খালে চলাচল করত যাত্রীবাহী, মালবাহী বড় বড় নৌযান। এখন চলাচল তো দূরের কথা খালের পাশ দিয়ে হাঁটাও দায়। ৭ কিলোমিটার খালের প্রায় অর্ধেক পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে।

এক যুগ আগেও শুভাঢ্যা খালের মধ্যপাড়া থেকে কালিগঞ্জ পর্যন্ত নৌকায় যাতায়াত করতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু বর্তমানে শুভাঢ্যা খালের এই অংশ ভরাট হয়ে এমন অবস্থা হয়েছে যে কেউ চাইলেই হেটে হতে পারেন। বর্জ্য আবর্জনার স্তুপ জমে খালের প্রায় অর্ধেকটা ভরাট হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও পড়েছে দখলদারদের থাবা। খালের চর কালীগঞ্জ, কালীগঞ্জ বাজার, জোড়া ব্রিজ, নয়া শুভাঢ্যা, কদমতলী, চরকুতুব, ঝাউবাড়ি, বেগুনবাড়ি ও গোলামবাজার অংশ ঘুরে দেখা যায়, খালের এসব অংশে দেখা গেছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। চরকালীগঞ্জ থেকে গোলামবাজার পর্যন্ত অংশে অনেক জায়গায় লোকজনকে হেঁটেই খাল পার হতে দেখা যায়। তবে খালের গোলামবাজার অংশ থেকে রাজেন্দ্রপুর হয়ে ধলেশ্বরী নদী পর্যন্ত কিছুটা পানি রয়েছে।
শুভাঢ্যা খালের দৈর্ঘ্য সাত কিলোমিটার। বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা এই খাল ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চর কালীগঞ্জ থেকে
শুরু হয়ে রাজেন্দ্রপুর বাজার এলাকায় গিয়ে শেষ হয়েছে। কেরানীগঞ্জের আগানগর, শুভাঢ্যা ও তেঘরিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে গেছে এই খাল। খালের দুই
তীরে কয়েক লাখ মানুষের বসবাস। বাসা বাড়ীর সকল বর্জ্য ফেলা হয় খালের ভেতরে। ফলে খালের শুরুর অংশের বেশিরভাগ ভরাট হয়ে পানিশুন্য হয়ে গেছে।
চরকুতুব এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০১২ সালেও খালটি ব্যবহারের উপযোগী ছিল। তিনি নিজে নৌকায় করে কালীগঞ্জে গিয়েছেন। তখন অনেকে এই খালে নিয়মিত গোসল করতেন। শুভাঢ্যা উত্তর ও মধ্যপাড়া জামে মসজিদে আগত মুসল্লিরা
এই খালের পানি দিয়েই অজু করতেন।
খালের জোড়া ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, খাল দখল ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলে এ অবস্থা হতো না। খালে
পানি প্রবাহ বন্ধ থাকার কারণে ভারী বৃষ্টি হলে শুভাঢ্যা পশ্চিমপাড়া ও ঘোষপাড়া এলাকায় এখন জলাবদ্ধতা হয়। এই দুই এলাকায় লাখখানেক মানুষের বাস।
স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন সময়ে এই খাল দখলমুক্ত ও বর্জ্য অপসারণের কাজ করেছিল স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু এসব উদ্যোগ স্থায়ীভাবে কাজে আসেনি। ২০০৭
সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে খাল পুনরুদ্ধারে বড় ধরনের অভিযান চালানো হয়েছিল। তখন এই খালে পানির প্রবাহ ফিরে এসেছিল। কিন্তু চার–পাঁচ বছর পর পরিস্থিতি আবার আগের জায়গায় চলে
যায়।
জানা গেছে, এই খাল পুনরুদ্ধার ও রক্ষণাবেক্ষনে পানি উন্নয়ন বোর্ড নতুন করে একটি প্রকল্প নিয়েছে। গত ২৯/০৮/২০২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত একনেক সভায়
‘শুভাঢ্যা খাল পুনঃখনন এবং খালের উভয় পাড়ের উন্নয়ন ও সুরক্ষা প্রকল্প (১মপর্যায়)’ শীর্ষক ৩১৭ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে গত
৩১/১০/২০২৩ তারিখে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রশাসনিক অনুমোদন পত্র জারী করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে দরপত্র আহবান করা হয়েছে।
সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে সিএস মৌজা ম্যাপ ও পানি আইন-২০১৩ (ফোরশোর) অনুযায়ী শুভাঢ্যা খালের সীমানা নির্ধারন পূর্বক অবৈধ স্থাপনা
উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঢাকা জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়া হয়েছে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু রিয়াদ বলেন, শুভাঢ্যা খালের সীমানা নির্ধারন ও অবৈধ স্থাপনার তালিকা করা হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা
উচ্ছেদ কার্যক্রম চলছে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, শুভাঢ্যা খাল পুনরুদ্ধারের চেষ্টা বড় পরিসরে প্রথম শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের
সময়। সে সময় খালের প্রায় তিন কিলোমিটার অংশে ১৮৬টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এরপর খালে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক হয়। তবে কয়েক বছর পর খালটি আবার ভরাট হতে থাকে। এমন প্রেক্ষাপটে ২০১২ সালের শেষ দিকে উপজেলা প্রশাসন খালটিকে আগের অবস্থায় ফেরাতে উদ্যোগ নেয়। তখন ব্যয় হয় ৫৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। ২০১৫ সালে এসে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিল থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করে খালের দুই তীরের কিছু অংশে ‘ব্লক’ বসানো হয়। একই সঙ্গে খালের খনন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কাজও হয়। ২০১৬
সালে উপজেলা প্রশাসন দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচি ও কাবিখা প্রকল্পের আওতায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে খালের বর্জ্য অপসারণ করে। তবে এত কিছুর পরও এই খাল বড় অংশই ভরাট হয়ে গেছে। দখল ও দূষণ বন্ধ হয়নি।

Împărtășește-ți dragostea
Sader Bhulo
Sader Bhulo
Articole: 174

Lasă un răspuns

Adresa ta de email nu va fi publicată. Câmpurile obligatorii sunt marcate cu *

Stay informed and not overwhelmed, subscribe now!