Breaking News



Popular News



Enter your email address below and subscribe to our newsletter
নিজস্ব প্রতিনিধি
ভারতীয় উপমহাদেশের সংগীত প্রেমীদের কাছে অতি পরিচিত নাম শিল্পী তালাত মাহমুদ। ১৯২৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী লখনউ-এর এক সম্ভ্রান্ত রক্ষনশীল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। পিতা মঞ্জুর মাহমুদ ৷ তিনি ছিলেন হিন্দী, উর্দূ, বাংলা বিশেষত গজলের কিংবদন্তী কন্ঠশিল্পী। সু-মধুর, মসৃণ সুরেলা কন্ঠে তার গীত গজল তাকে ‘গজল সম্রাট’ উপাধি দিয়েছিল। বাংলা গানেও তিনি সমান পারদর্শী ছিলেন।
তোমারে লেগেছে এত যে ভাল, চাঁদ বুঝি তা জানে , তুমি সুন্দর যদি নাহি হও , আধোরাতে যদি ঘুম ভেঙ্গে যায় , শোন গো সোনার মেয়ে , রূপের ঐ প্রদীপ জ্বেলে , তুমি চিরদিন যদি নাহি রবে মোর জীবনে , তুমি শুধু গেছো ভুলে ইত্যাদি বেশ কিছু বাংলা গানের মাধ্যমে কোটি কোটি সংগীত প্রেমীর হৃদয় জয় করেন তালাত মাহমুদ ৷ তিনি ‘তপনকুমার’ নামে বহু বাংলা গান গেয়েছেন ! তিনি বেশ কিছু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন ৷
১৯৩০ দশকের শেষ দিকে পন্ডিত এস সি আর ভাট-এর কাছে ধ্রুপদী সংগীতে তাঁর হাতেখড়ি হয় ৷ সংগীতের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ দেখা দিলেও তার রক্ষনশীল পরিবার বিষয়টি কোন ক্রমেই মেনে নিতে সম্মত ছিলনা। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, তালাত মাহমুদকে সংগীত ও ফিল্মের ক্যারিয়ার বেছে নিয়ে পরিবার ত্যাগ করতে হবে নয়তো সংগীত জগৎ ত্যাগ করে তার পারিবারিক ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। এরমধ্যে তালাত মাহমুদ সংগীত জগত বেছে নেন এবং সুদীর্ঘ এক যুগ পর তালাত মাহমুদ সফল হবার পরই পরিবার তার সংগীত ক্যারিয়ার মেনে নেয়।
সংগীতে তালাত মাহমুদের ক্যারিয়ার শুরু হয় একজন বিশুদ্ধ গজল শিল্পী হিসেবে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি দাগ , জিগর, মির নামক কয়েকটি সিনেমায় গজল গেয়ে সাড়া ফেলে দেন। এ সময় অল ইন্ডিয়া রেডিও (লখনৌতে) সংগীত শিল্পী হিসেবে যোগ দেন। এইচ এম ভি তরুন তালাতের প্রতিভায় আকৃষ্ট হয়ে তাকে চুক্তিবদ্ধ করে এবং ১৯৪১ সালে তালাত ‘সব দিন এক সমান নাহি থা’ গজলটি রেকর্ড করেন। গজল শিল্পী হিসেবে তালাত মাহমুদের নাম গোটা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। তালাত মাহমুদ তখন লখনউ ছেড়ে কলকাতায় আসেন। কোলকাতায় পৌছানোর আগেই তার খ্যাতি সংগীত জগতে পৌছে গিয়েছিল। ১৯৪৪ সালে তার বিখ্যাত গজল ‘তাসভির তেরি দিল মেরা বেহেলা কা সাকো গি’ বের হয়। উক্ত গজলটি অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা পায় যার সুবাদে উপমহাদেশে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৪৯ সালে তিনি বোম্বে যান ৷ ‘আরজু’ চলচ্চিত্রে – এ্যাই দিল মুঝে এইসি জাগা লে চল যায়ে.তাকে খ্যাতি এনে দেয় ৷ তিনি দীর্ঘ সংগীত জীবনে ৮০০ গান গেয়েছেন ৷
১৯৯৮ সালের ৯ মে গজলের কিংবদন্তি , সত্যিকারের সজ্জন এবং জেন্টেলম্যান শিল্পী তালাত মাহমুদ পরলোকগমন করেন। বাংলা আধুনিক, চিত্রগীতি, নজরুল গীতি, গজল, গীত, হামদ, নাত এবং ভারতের বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষার গানে কন্ঠ দান করেন। কিংবদন্তী এই সংগীত শিল্পী কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯২ সালে পেয়েছেন ‘পদ্মভূষণ’ সম্মান।
আজ এই বিশিষ্ট শিল্পীর ২৭-তম প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই।