বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবেন টেলিটকের গ্রাহকেরা
Share your love
ঢাকা: বাংলাদেশের টেলিকম খাতে প্রথমবারের মত অপারেটরদের ভেতর পারস্পরিক নেটওয়ার্ক অবকাঠামো ভাগাভাগির মাধ্যমে ন্যাশনাল রোমিং সার্ভিস বা একটিভ শেয়ারিং চালু করতে যাচ্ছে বাংলালিংক ও টেলিটক। এ অপারেটর দুটি যৌথভাবে একটিভ শেয়ারিং বা ন্যাশনাল রোমিং সার্ভিস বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি পাইলট প্রকল্প উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়েছে।
এই একটিভ শেয়ারিং এর মাধ্যমে টেলিটকের গ্রাহকরা নেটওয়ার্ক কাভারেজ বিহীন এলাকায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। এই উদ্যোগের ফলে টেলিকম খাতে সামগ্রিক সেবার মান বাড়ার পাশাপাশি টেলিকম অবকাঠামোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হবে এবং এতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।
স্বাধীনতা দিবসে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল অডিটোরিয়ামে যুগান্তকারী এই সেবা চালুর ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশের টেলিকম খাতের ইতিহাসে এটিই সর্বপ্রথম ঘটনা, যেখানে দুইটি ভিন্ন টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নেটওয়ার্ক অবকাঠামো ভাগ করে ব্যবহার করতে যাচ্ছে। এটি ভবিষ্যতে গ্রাহক সেবার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে নেওয়া অনন্য পদক্ষেপ হিসেবে সব অপারেটরদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।
পরীক্ষামূলক ফিল্ড ট্রায়ালের সফলভাবে শেষ করার পর প্রতিষ্ঠান দুটি পাইলট প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দুই মাস মেয়াদি এই একটিভ শেয়ারিং বা জাতীয় রোমিং-এর পাইলট প্রকল্পে নির্বাচিত দুই হাজার টেলিটক পোস্ট-পেইড ও প্রি-পেইড গ্রাহক বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ভয়েস কল, এসএমএস ও ওকলা স্পিডটেস্ট স্বীকৃত দেশের সবচেয়ে দ্রুতগতির ফোর-জি ইন্টারনেট সেবা উপভোগ করতে পারবেন। এই পাইলট প্রকল্পের সফলতার ওপর ভিত্তি করে বাংলালিংক ও টেলিটক দেশব্যাপী বাণিজ্যিক ভিত্তিতে একটিভ শেয়ারিং চালু করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনায় আমরা বাংলাদেশের টেলিকম খাতে যুগান্তকারী একটিভ শেয়ারিং বা ন্যাশনাল রোমিং চালু করতে যাচ্ছি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের উদ্ভাবনী, সৃষ্টিশীল ও সমস্যা সমাধানে দক্ষ হতে হবে। একটিভ শেয়ারিং এমনই একটি সৃষ্টিশীল সমাধান যার মাধ্যমে টেলিটক ও বাংলালিংকের গ্রাহকরা একে অপরের নেটওয়ার্ক কভারেজ ব্যবহার করতে পারবেন। এর ফলে টেলিটকের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো লাভজনক হতে পারবে। বাংলালিংক ও টেলিটকের এই যুগান্তকারী উদ্যোগকে অনুসরণ করে ভবিষ্যতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি পারস্পারিক আরও বেশি সহযোগিতার মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের পথকে তরান্বিত করবে বলে আশা করছি।
অনুষ্ঠানে বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিটিআরসি সব সময় আন্তঃশিল্প অবকাঠামো ভাগাভাগিকে অগ্রাধিকার দেয় ও এই সংক্রান্ত অংশীদারত্বের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে উৎসাহ দেয়। দেশের অন্যতম উদ্ভাবনী ডিজিটাল অপারেটর বাংলালিংক ও টেলিটকের মধ্যকার সক্রিয় শেয়ারিং (রোমিং) সেবার উদ্বোধন এই ধরনের অংশীদারত্বের পথকে আরও সুগম করবে। আমরা বাংলালিংক ও টেলিটকের জন্য এই প্রক্রিয়াটি যেন সহজতর হয় সেই লক্ষে সব ধরনের সহযোগিতা করব। একইসঙ্গে সফল বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত এই ফিল্ড ট্রায়াল থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর বিষয়ে আশাবাদী।
বাংলালিংকের সিইও এরিক অস বলেন, বাংলালিংকে আমরা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টেলিকম নীতিমালার সঙ্গে সমন্বয় করে গ্রাহকদের সর্বোত্তম সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। টেলিটকের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের প্রথমবারের মতো একটিভ শেয়ারিং বাস্তবায়ন করা বাংলালিংকের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
এই চুক্তির ফলে, টেলিটকের গ্রাহকরা দেশব্যাপী বাংলালিংকের ১৬ হাজারেরও বেশি টাওয়ার সমৃদ্ধ সবচেয়ে দ্রুতগতির মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে সক্ষম হবেন। সম্প্রতি সারা দেশে আমরা আমাদের মোবাইল নেটওয়ার্ক কভারেজ দ্বিগুণ করেছি, যার সুফলও গ্রাহকরা উপভোগ করতে পারবেন।
টেলিটকের এমডি এ কে এম হাবিবুর রহমান বলেন, একটিভ শেয়ারিং (রোমিং) এর পাইলট প্রকল্প চালু হওয়া বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের জন্য একটি অন্যতম অর্জন। গ্রাহকদের মানসম্মত সেবা দানে টেলিটক সবসময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলালিংকের সঙ্গে এই চুক্তি গ্রাহকদের সেবার মান বাড়াতে সহায়তা করবে, যা গ্রাহকদের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন।