ফের শেষ মুহূর্তের গোলে হারল বাংলাদেশ
Share your love
ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ফিরতি লেগের ম্যাচে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রশংসনীয় ফুটবল খেললো বাংলাদেশ। তবে শেষ মুহুর্তে গোল হজম করে আবারও হতাশায় মাঠ ছাড়তে হলো তাদের।
ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে গোল হজম করে ১-০ গোলে হারতে হয়েছে হ্যাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যদের।
পুরো ম্যাচেই রক্ষণ সামলে প্রতি আক্রমণে উঠেছে বাংলাদেশ। তাদের আক্রমণে শেষ দিকে জয়ের স্বপ্নও উঁকি দিচ্ছিল সমর্থকদের মনে। তবে যোগ করা সময়ের সপ্তম মিনিটে গোল হজম করে সব স্বপ্নে গুড়ে বালি পড়ে। ম্যাচের শেষ দিকে চোটের কারণে মাঠ ছাড়তে হয়েছে পুরো ম্যাচে দারুণ ফুটবল খেলা মিতুল মারমাকে। তার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মেহেদি হাসান শ্রাবন। ম্যাচে মানিয়ে নেওয়ার আগেই গোল হজম করতে হলো তাকে।
অন্যদিকে ম্যাচের যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে দশ জনের দলে পরিণত হয় ফিলিস্তিন। রাকিব চোট পেয়ে মাঠে বসে পড়লে তাকে টেনে বাই লাইনের বাইরে রেখে আসেন ফিলিস্তিনের ফুটবলার আমিদ মাহানজে। তার এমন আচরণে রেফারি হলুদ কার্ড দেখান। সেই কার্ডের জন্য প্রতিক্রিয়া দেখালে লাল কার্ড দেখেন ফিলিস্তিনি ফুটবলার।
বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় ম্যাচের ১২তম মিনিটে প্রতিপক্ষের ফ্রি কিক থেকে পিছিয়ে পড়তে পারতো বাংলাদেশ। গোলরক্ষক মিতুল মারমার দিকে সোজাসুজি নেওয়া শটটি ড্রপ খেয়ে লাফিয়ে ওঠে। তবে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় বল ক্লিয়ার করেন তিনি। ২১তম মিনিটে ডানপ্রান্ত দিয়ে হঠাৎ আক্রমণে ওঠে বাংলাদেশ। তপু বর্মণের বাড়ানো বল ধরে বক্সে ঢুকে পড়েন মোহাম্মদ ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। তবে বামপ্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢোকা সতীর্থের কাছে ঠিকঠাক ক্রস দিতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড।
২৯ মিনিটে ভালো একটি আক্রমণে ওঠে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের কর্ণার কিক থেকে পাল্টা আক্রমণে ওঠে বাংলাদেশ। রাকিব হোসেন একাই বল নিয়ে ঢুকে পড়েন বক্সে। তবে ব্যাক পাস ধরে জনি আটকে পড়েন জটলার মধ্যে। শট নেওয়ার আগেই কিংসের এই খেলোয়াড়ের থেকে বল কেড়ে নেয় ফিলিস্তিন। দারুণ আক্রমণ প্রতিহত হয় জনির ভুলে। ২ মিনিট পর ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। জামালের ফ্রি কিক বক্সের ডানপাস ঘেষে বেড়িয়ে যায়। তিন মিনিট পর বক্সের সামনে থেকে অন টার্গেটে শট নেন ওদয় দাবাগ। তবে সহজেই তার নেওয়া কোনাকুনি শটটি ধরে ফেলেন মিতুল।
খেলার ৩৯ মিনিটে বক্সের কয়েক গজ দূর থেকে মুসাব ভাট ফ্রি কিক নিতে আসেন। বক্সে দাঁড়িয়ে হেড নেন শিহাব কুম্বোর। তবে দুর্দান্ত মিতুলকে পরাস্ত করা যায়নি। এ যাত্রায় বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছেন তিনি। এক মিনিট পর আরও ভয়ানক বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। বক্সের মধ্যে ফাকা জায়গায় বল পায় ফিলিস্তিন। তবে বাংলাদেশি ডিফেন্ডারদের অসাধারণ ণৈপুন্যে বিপদমুক্ত হয় বাংলাদেশ।
৪৩ মিনিটে রাকিবের হেড বুক দিয়ে ঠেকিয়ে পায়ে নেন জামাল। ডানপ্রান্ত দিয়ে এগিয়ে যান প্রতিপক্ষের বিপদসীমায়। মাঝ মাঠ দিয়ে তাকে অনুসরণ করে বক্সে ঢুকে পড়েন ফাহিম। জামাল সেটি দেখেই কি না পাস দিলেন তাকে। প্রতিপক্ষের দুজন খেলোয়াড়কে বোকা বানিয়ে জামাল বল ক্রস দেন ফয়সালকে। কিন্তু সামনে থাকা গোলরক্ষককে বোকা বানাাতে পারেননি তিনি। ওয়ান ওয়ান খেলায় পারলেন না ফয়সাল। খেলার প্রথমার্ধে এটাই সবচেয়ে বড় সুযোগ, যেটি মিস করল বাংলাদেশ। গোলশূন্য ড্র মেনে বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতির পর একাধিক পরির্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। ম্যাচের আগে জয়ের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছিলেন জামাল ভূঁইয়া। বিরতীর পরে বাংলাদেশের খেলায় তারওেই প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। দ্রুতই দারুণ কিছু সুযোগও তৈরি করেন তারা। তবে গোল মিসের হতাশা সঙ্গী হয় তাদের। গোল মিস করেছে ফিলিস্তিনও। যদিও তাদের চেয়ে বেশি কৃতিত্ব পাবেন গোলবারের অতন্দ্র প্রহরী মিতুল।
৭০ মিনিটে জামালকে তুলে নেন কোচ। তার বদলি হিসেবে নামেন মোহাম্মদ সোহেল রানা (জুনিয়ার)। এক মিনিট পর ডানপ্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠেন রাকিব। তবে দুই সোহেল যেন মাঝমাঠে দাড়িয়ে তার খেলাই দেখছিলেন। পাস দেওয়ার জন্য কাউকে না পেয়ে মেজাজই হারিয়ে বসলেন এই ফরোয়ার্ড। খেলার ৭৩ মিনিটে ব্যাথা পেয়ে মাঠ ছাড়েন মিতুল। তার পরিবর্তে নামেন মেহেদি হাসান শ্রাবন। ৮৮ মিনিটে জনিকে তুলে ইসা ফয়সালকে মাঠে নামান কোচ।
খেলার শেষ মিনিটে অল্পের জন্য গোল পায়নি বাংলাদেশ। ইসা ফযসালের পাস ধরে বক্সে গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারেননি রাকিব। দশ জনের দলে পরিণত হয় ফিলিস্তিন। লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন আমিদ মাহাজনি।
যোগ করা সময়ের চার মিনিটের মাথায় গোল হজম করে বাংলাদেশ। মুসাবের পাস থেকে হেড নেন বদলি খেলোয়াড় ইসলাম বাতরান। বক্সের বাম প্রান্তে ফাকায় বল পেয়ে যান তেরমানিনি। ডান পায়ের কোনাকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই ডিফেন্ডার। ১-০ গোলে লিড নেয় অতিথিরা।
খেলার বাকি সময় চেষ্টা করেও ফলাফলে পরিবর্তন আনতে পারেনি বাংলাদেশ। এই হারে টেবিলের তলানিতে থাকলো বাংলাদেশ। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের এই জয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির কোথাও হয়তো ক্ষণিকের স্বস্তি মিলেছে। হয়তো কারো মুখে হাসি ফুটেছে।