Enter your email address below and subscribe to our newsletter

দিনে কতটা পানি পান করা উচিত?

Share your love

আমার স্বাস্থ্য কথা:

আপনি ক্লান্ত থাকুন বা আপনার ত্বক শুষ্ক হোক এক্ষেত্রে নিরাময় হিসাবে আপনাকে সম্ভবত আরও পানি পান করতে বলা হয়েছে। কিন্তু এটি কতটা সঠিক পরামর্শ?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, কেউ যদি সবসময় নিজের সাথে পুনঃব্যবহারযোগ্য পানির বোতল বহন করেন তাহলে অভ্যাসবশত দেখা যায় তিনি তার শরীরের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি পান করছেন।

এক সময় মানুষকে বিশুদ্ধ পানির অভাবে তৃষ্ণা নিয়ে বাঁচতে হয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখন এমন সময় এসেছে যে মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পানি পান করে।

সেটা বোতলজাত পানি বিক্রি বেড়ে যাওয়া থেকেই আন্দাজ করা যায়। বেশি বেশি পানি পানের আরেকটি বড় কারণ পানি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য ছড়ানো।

যেমন: প্রতিদিন বেশি বেশি পান করা সুস্বাস্থ্য, শক্তি এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার গোপন রহস্য, বেশি বেশি পানি খেলে ওজন কমবে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পাবে।

পানির চাহিদা পূরণে ৮*৮ নিয়মটি বেশ জনপ্রিয়। এর মানে প্রতিদিন আটবার পানি পান করা এবং প্রতিবার ২৪০ মিলিলিটার পানি গ্রহণ।

এতে সারাদিনে দুই লিটারের মতো পানি খাওয়া হয়। তবে এই নিয়মকে বিজ্ঞান সমর্থন করে না।

একজন মানুষকে দিনে কতটা পানি পান করতে হবে সে সম্পর্কে এত অস্পষ্ট তথ্য কেন? সম্ভবত, কয়েক দশক আগের দুটি ভুল নির্দেশনা থেকে এই ভুল ব্যাখ্যা এসেছে।

১৯৪৫ সালে ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের ইউএস ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বোর্ড প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি ক্যালোরি খাবারের জন্য এক মিলিলিটার তরল খাওয়ার পরামর্শ দেয়।

অর্থাৎ কেউ যদি দৈনিক ২০০০-ক্যালরি ডায়েট করে তাহলে দুই হাজার মিলিলিটার অর্থাৎ দুই লিটার পানি খেতে হবে।

তবে এই পানির মধ্যে অন্যান্য পানীয় অন্তর্ভুক্ত থাকে – সেইসাথে যেসব ফল এবং শাকসবজিতে প্রচুর পানি থাকে সেগুলোও যোগ হবে।

দিনে কত পানি পান করা উচিত?

প্রতিদিন আট গ্লাস বা প্রায় দুই লিটার পানি পান করলে আমাদের শরীর প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আর্দ্র থাকে, সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে।

এর পরিবর্তে, আপনার প্রতিদিন দেড় লিটার থেকে এক লিটার আটশ মিলিলিটার পানি পান করা উচিত।

অর্থাৎ ছয় গ্লাস থেকে সাত গ্লাস কিংবা তার সামান্য কিছু বেশি।

৮*৮ নিয়ম অনুসরণ করার পরিবর্তে – আপনার শরীরের তাপমাত্রা, স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, পরিবেশ ও আবহাওয়া বিবেচনায় কতোটুকু পানি পান করা উচিত সেটা বের করে নিন।

এই পানি গ্রহণের পরিমাণ একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হবে।

যারা গরম এবং আর্দ্র পরিবেশে এবং উঁচু কোথাও বাস করেন, সেইসাথে ক্রীড়াবিদ এবং গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো নারীদের অন্যদের তুলনায় বেশি পানি পান করতে হবে, বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

১৯৭৪ সালে, পুষ্টিবিদ মার্গারেট ম্যাকউইলিয়ামস এবং ফ্রেডেরিক স্টেয়ারের মতে, প্রাপ্তবয়স্করা দিনে ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করে।

তবে, এর মধ্যে ফল এবং সবজিতে থাকা পানি, ক্যাফিনযুক্ত এবং কোমল পানীয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

হাইড্রেশনের বিজ্ঞান

পানি, অবশ্যই, গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শরীরের ওজনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ পানি।

এই পানি আমাদের শরীরে খাবারের পুষ্টিগুণ ছড়িয়ে দেয়, বর্জ্য পদার্থ বহন করে, আমাদের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, আমাদের জয়েন্টগুলোয় লুব্রিকেন্ট সরবরাহ করে যেন যেকোনো শক শোষণ করতে পারে।

সেইসাথে শরীরের ভিতরে বেশিরভাগ রাসায়নিক বিক্রিয়াতে ভূমিকা পালন করে এই পানি।

আমরা ক্রমাগত ঘাম, প্রস্রাব এবং শ্বাসের মাধ্যমে পানি হারাচ্ছি। পর্যাপ্ত পানি পান করা প্রয়োজন এই কারণে যেন আমাদের শরীর পানি হারানোর ফলে শুষ্ক না হয়ে যায়।

শরীরে যেন পানি গ্রহণ ও হারানোর একটা ভারসাম্য থাকে।

পানিশূন্যতার লক্ষণগুলি শনাক্ত করা যায় যখন আমরা আমাদের শরীরের এক থেকে দুই শতাংশ পানি হারিয়ে ফেলি।

যতক্ষণ না আমরা পুনরায় পানি খেয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের পানিশূন্যতা বাড়তেই থাকে এবং তা মারাত্মক হতে পারে।

৮*৮ নিয়মের কারণে বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন অপ্রমাণিত দাবি বিশ্বাস করতে হয়েছে।

যার মধ্যে একটি হল তৃষ্ণা অনুভব করা মানে আমরা ইতিমধ্যেই বিপজ্জনকভাবে পানিশূন্য হয়ে গেছি।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা অনেকাংশে সম্মত হয়েছেন যে আমাদের শরীর যে পরিমাণ পানি পানের জন্য সংকেত দেয়, তার চেয়ে বেশি তরল আমাদের প্রয়োজন হয় না।

“শরীরের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আমরা বিবর্তনের মাধ্যমে রপ্ত করেছি। পর্যাপ্ত আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য আমরা প্রচুর কৌশল ব্যবহার করি,” বলেছেন ম্যাসাচুসেটসের ইউনিভার্সিটির নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড এজিং ল্যাবরেটরির সিনিয়র বিজ্ঞানী ইরউইন রোজেনবার্গ।

শরীর পানিশূন্য হয়ে যাচ্ছে কি না এটি একটি সুস্থ শরীরে ও মস্তিষ্ক শনাক্ত করতে পারে। পানিশূন্যতা দেখা দিলেই তৃষ্ণার অনুভূতি জেগে ওঠে। যেন মানুষ পানি পান করে।

এটি একটি হরমোনও নিঃসরণ করে যা কিডনিকে প্রস্রাব ঘন করে জল সংরক্ষণ করার জন্য সংকেত দেয়।

স্পোর্টস মেডিসিন, এক্সারসাইজ অ্যান্ড হেলথ অ্যান্ড ইউসিএল-এর কনসালট্যান্ট স্পোর্টস ফিজিশিয়ান এবং প্রিন্সিপাল ক্লিনিকাল টিচিং ফেলো এবং ব্লেনহেইম অ্যান্ড লন্ডন ট্রায়াথলনসের মেডিক্যাল ডিরেক্টর কোর্টনি কিপস বলেছেন, “আপনি যদি আপনার শরীরের কথা শোনেন, তাহলে এটি আপনাকে বলে দেবে আপনি কখন তৃষ্ণার্ত।”

পানীয় হিসেবে পানি সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর। কারণ এতে কোনো ক্যালোরি নেই।

অন্যান্য পানীয়গুলো শরীরকে আর্দ্র করে ঠিকই। কিন্তু চা, কফি বা ক্যাফেইনজাতীয় পানীয় সেইসাথে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় হালকা মূত্রবর্ধক হয়ে থাকে।

ফলে এতে শরীর আর্দ্র যেমন হবে, তেমনি দ্রুত সেই আর্দ্রতাও বেরিয়ে যাবে।

বেশি পানি পান করলে কি ওজন কমবে?

আমাদের শরীর যতোটা পানি পানের সংকেত দেয়, তার চেয়ে বেশি পানি পান করলে পানিশূন্যতা এড়ানোর বাইরেও অনেক সুবিধা হবে,এই তথ্যের আসলে কোনো প্রমাণ নেই।।

তবে গবেষণায় দেখা গেছে, কেউ যদি কোনো অবস্থাতে শরীরকে পানিশূন্য হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা রয়েছে।

বেশ কয়েকটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, পানিশূন্যতা এড়াতে যথেষ্ট পানীয় খেলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ঠিক থাকে।

২০২৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সঠিকভাবে আর্দ্র থাকলে বার্ধক্যের ছাপও দেরিতে পড়ে। হৃদরোগ এবং ফুসফুসের রোগ এড়ানো যায়।

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত পানি পান ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

ভার্জিনিয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এবং স্টেট ইউনিভার্সিটির মানব পুষ্টি, খাদ্য এবং ব্যায়ামের অধ্যাপক ব্রেন্ডা ডেভি পানি গ্রহণ এবং ওজন নিয়ে গবেষণা করেছেন।

এই গবেষণায় তিনি দুটি দলের ওপর পরীক্ষা চালান। দুটি গ্রুপকে তিন মাসের জন্য স্বাস্থ্যকর ডায়েট অনুসরণ করতে বলা হয়।

তবে শুধুমাত্র একটি গ্রুপের সদস্যদের বলা হয় প্রতিটি খাবার খাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে ৫০০ মিলিলিটার বা দুই গ্লাসের মতো পানি খেতে।

যে দলটি খাবার খাওয়ার আগে পানি পান করেছে তাদের ওজন অন্য দলের চেয়ে বেশি কমেছে।

উভয় গ্রুপকে দিনে ১০ হাজার কদম হাটতে বলা হয়েছিল এবং যারা পানি পান করেছে তারা এই হাঁটার কাজটা আরও ভালভাবে করতে পেরেছে।

ডেভির মতে, এক থেকে দুই শতাংশ হালকা পানিশূন্যতা বেশ সাধারণ এবং অনেক মানুষ বুঝতে পারে না কখন তাদের পানির ঘাটতি হয়েছে।

অথচ পানিশূন্যতার হালকা স্তরটি আমাদের মেজাজ এবং শক্তির স্তরকে প্রভাবিত করতে পারে।

পানিশূন্যতা হয়েছে কীভাবে বুঝবেন

পানিশূন্যতা মানে আপনি যত বেশি তরল গ্রহণ করছেন তার চেয়ে বেশি তরল হারাচ্ছেন।

ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তথ্য মতে, পানিশূন্যতার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে গাঢ় হলুদ প্রস্রাব; ক্লান্তিবোধ, হালকা মাথা ব্যথা বা মাথা ঘোরানো অনুভূতি, মুখ, ঠোঁট এবং চোখ শুষ্ক লাগা এবং দিনে চারবারের কম প্রস্রাব করা।

কিন্তু সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হলো বার বার তৃষ্ণা পাওয়া।

তবে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিনের অধ্যাপক বারবারা রোলস বলেছেন যে পানীয় জাতীয় খাবার খেলে ওজন কমার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে সেটা অবশ্যই কোনো চিনিযুক্ত পানীয় নয়।

“আরকটি ধারণা আছে যে খাওয়ার আগে পেট ভরে পানি খেয়ে নিলে ওজন কমে যাবে। তবে এই ধারণাটি সঠিক নয়, কেননা পানি নিজেই খালি পেট থেকে দ্রুত বের হয়ে যায়।”

“কিন্তু আপনি যদি খাবারের মাধ্যমে বেশি পানি পান করেন, যেমন স্যুপ। সেটা আপনার শরীরের পানি-স্বল্পতা পূরণে যেমন কাজ করবে। তেমনি এই পানি যেহেতু খাবারের সাথে যুক্ত থাকে সেটাও পেটে বেশিক্ষণ থাকবে,” তিনি বলেন।

বেশি পানি পান করার আরেকটি কথিত স্বাস্থ্য উপকারিতা হলো ত্বকের রং উজ্জ্বল হবে এবং ত্বকের আর্দ্রতা ভালো হবে।

কিন্তু এর পিছনে বিশ্বাসযোগ্য বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণের অভাব রয়েছে।

আপনি কি খুব বেশি পানি পান করতে পারেন?

আমরা যারা প্রতিদিন আট গ্লাস পানি খাওয়ার লক্ষ্য রাখি তারা নিজেদের কোনো ক্ষতি করছি কি না তা জেনে রাখা প্রয়োজন।

যে বিশ্বাসের জন্য আমরা শরীরের দেয়া সংকেতের চেয়ে বেশি বেশি পান করি কখনও কখনও তা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

অত্যধিক তরল গ্রহণ গুরুতর হয়ে উঠতে পারে যখন এটি রক্তে সোডিয়ামের তরলীকরণ ঘটায়।

এর ফলে মস্তিষ্ক এবং ফুসফুসে পানি জমে যায়। কারণ রক্তের সোডিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য অতিরিক্ত তরল বিভিন্ন জায়গায় জমা করা হয়।

একটি ক্রীড়া ইভেন্টের সময় অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে কারণে অন্তত ১৫ জন ক্রীড়াবিদ মারা গিয়েছিলেন। তার পর থেকে গত এক দশক বা তারও বেশি সময় ধরে সতর্ক আছে কিপস।

তার মতে, এর আংশিক কারণ আমরা নিজেদের তৃষ্ণার অনুভূতির প্রতি আস্থা রাখতে পারছি না এবং আমরা মনে করি যে আমাদের শরীর পানিশূন্যতা এড়াতে যতটা পানি চাইছে, আমাদের তার চেয়ে বেশি পানি পান করা দরকার।

“হাসপাতালের নার্স এবং ডাক্তাররা ভীষণ পানিশূন্যতায় আক্রান্ত রোগীদের দেখতে পান যাদের অবস্থা খুব খারাপ। যারা কয়েকদিন ধরে পান করতে পারছেন না।

তবে এই ঘটনার সাথে ম্যারাথনের সময় মানুষ পানিশূন্যতা নিয়ে যে উদ্বিগ্ন হয় তার থেকে একদমই আলাদা,” তিনি বলেছেন।

জোহানা পাকেনহ্যাম ২০১৮ সালের লন্ডন ম্যারাথনে দৌড়েছেন, ওই সময় রেকর্ড পরিমাণে গরম পড়েছিল।

কিন্তু তিনি এর বেশিরভাগই মনে করতে পারেন না কারণ তিনি দৌড়ের সময় এত বেশি পানি পান করেছিলেন যে তিনি ওভারহাইড্রেশন তৈরি করেছিলেন, যা হাইপোনাট্রেমিয়া নামে পরিচিত। ওই দিন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল।

“আমার বন্ধু এবং সঙ্গী ভেবেছিল যে আমি পানিশূন্য হয়ে গেছি এবং তারা আমাকে একটি বড় গ্লাসে করে পানি দেয়। আমি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাই এবং আমার হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে যায়।”

“আমাকে হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রবিবার সন্ধ্যা থেকে পরের মঙ্গলবার পর্যন্ত এবং অচেতন ছিলাম,” তিনি বলেন।

পাকেনহ্যাম, যিনি এই বছর আবার ম্যারাথন করার পরিকল্পনা করেছেন, তিনি বলেছেন যে বন্ধুদের এবং ম্যারাথন পোস্টারে দেওয়া একমাত্র স্বাস্থ্য পরামর্শ ছিল প্রচুর পানি পান করা।

“ঠিক থাকার জন্য আমার যা লাগবে তা হলো কয়েকটি ইলেক্ট্রোলাইট ট্যাবলেট খাওয়া, যা আপনার রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়াবে। আমি এর আগে কয়েকটি ম্যারাথন দৌড়েছি এবং আমি তা জানতাম না,” তিনি বলেন।

আমি সত্যিই চাই যে মানুষ জানুক যে এত সাধারণ বিষয়টি কতোটা মারাত্মক হতে পারে – জোহানা পাকেনহ্যাম।

আপনার কতটা পানি প্রয়োজন?

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যার ক্রমাগত আর্দ্র থাকতে যেখানেই যান, সাথে করে পানি নিয়ে যান এবং তাদের শরীরের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পান করেন।

লন্ডনের ইন্সটিটিউট ফর স্পোর্ট, এক্সারসাইজ অ্যান্ড হেলথের গবেষণা পরিচালক হিউ মন্টগোমারি বলেছেন, “মরুভূমির মাঝখানে সবচেয়ে বেশি উত্তাপে একজন ব্যক্তি এক ঘণ্টায় দুই লিটার ঘামতে পারে, তবে এটি সত্যিই কঠিন।”

আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের প্রাকৃতিক তৃষ্ণার প্রক্রিয়া কম সংবেদনশীল হয়ে ওঠে এবং আমরা অল্পবয়সী লোকদের তুলনায় বেশি পানিশূন্য প্রবণ হয়ে পড়ি, বলেছেন ব্রেন্ডা ডেভি।

যারা বাস, মেট্রো বা গাড়িতে ১৫/২০ মিনিটের যাত্রার জন্য ৫০০ মিলিলিটার পানি বহন করেন তাদের ওইটুকু যাত্রায় এতোটা পানির প্রয়োজন নেই। এমনকি ঘামলেও না।

এক্ষেত্রে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ দিনে ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন, যার মধ্যে চা এবং কফি, দুধ এবং চিনি-মুক্ত পানীয় অন্তর্ভুক্ত হবে।

আবার এটি মনে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের তৃষ্ণার অনুভূতি ৬০ বছর বয়সের পর তেমন একটা সংবেদনশীল থাকে না।

গবেষকরা ২০২২ সালের ফলাফল প্রকাশ করে দেখিয়েছে যে, এর ফলে পানিশূন্যতার লক্ষণগুলি প্রায়শই উপেক্ষিত থাকে।

“বয়সের সাথে সাথে, আমাদের প্রাকৃতিক তৃষ্ণার অনুভূতি কম সংবেদনশীল হয়ে ওঠে এবং আমরা অল্পবয়সী মানুষদের তুলনায় বেশি পানিশূন্য প্রবণ হয়ে পড়ি। আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে আর্দ্র থাকার জন্য আমাদের তরল খাওয়ার অভ্যাসের প্রতি আরও মনোযোগী হতে হবে,” ডেভি বলেছেন।

বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ একটি বিষয়ে সম্মত হয়েছেন যে কার কতোটা তরল প্রয়োজনীয় সেটা একজন ব্যক্তির বয়স, শরীরের গড়ন, লিঙ্গ, পরিবেশ এবং শারীরিক কার্যকলাপের স্তরের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।

রোজেনবার্গ বলেছেন, “৮*৮ নিয়মের বড় একটি বিভ্রান্তির জায়গা হলো, আমরা আমাদের তরলের প্রয়োজনীয়তাকে শক্তির প্রয়োজনের মতোই ভাবতে শুরু করেছি।”

২০২২ সালে, অ্যাবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন যে মানুষের প্রতিদিন দেড় লিটার থেকে এক লিটার আটশ মিলিলিটার পানির প্রয়োজন। প্রস্তাবিত দুই লিটার বা আট গ্লাস নয়।

মানুষকে আর্দ্র রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ ঠিক করতে ২৩টি বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের সাথে সমন্বয় করে তারা এই পানির পরিমাপের বিষয়টি দাঁড় করিয়েছেন।

গবেষকরা দেখেছেন যে, যারা গরম এবং আর্দ্র পরিবেশে এবং উচ্চ উচ্চতায় বাস করেন, সেইসাথে ক্রীড়াবিদ এবং গর্ভবতী এবং স্তন্যপান করান যেসব নারী, তাদের অন্যদের তুলনায় বেশি পানি পান করতে হবে।

একজনের কতটা পানি প্রয়োজন তার জন্য সবচেয়ে বড় মাপকাঠি হল তিনি কতটা শক্তি ক্ষয় করেন। সবার ক্ষেত্রে একই পরিমাণ পানি খাওয়ার পদ্ধতি সঠিক নয়।

বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই একমত হন যে আমাদের প্রতিদিন হিসাব নিকাশ ছাড়া যে পরিমাণ পানি খাই তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই।

যখন আমরা তৃষ্ণার্ত থাকি তখন আমাদের দেহ আমাদেরকে সংকেত দেয়, যেমনটি ক্ষুধার্ত বা ক্লান্ত থাকলে হয়।

আপনার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পান করার একমাত্র স্বাস্থ্য উপকারিতা হল এর ফলে আপনাকে বার বার টয়লেটে যেতে হয়। এর চেয়ে বেশি কিছু না।

তথ্য—- বিবিসির সৌজন্যে–

Share your love
Sader Bhulo
Sader Bhulo
Articles: 174

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Stay informed and not overwhelmed, subscribe now!